সর্বশেষ

শেখ হাসিনার 'অনুরোধ রাখেননি' -সেদিন ড. কামাল হোসেন

প্রকাশ :


/ শোকাবহ আগস্ট /

২৪খবরবিডি: '১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা ব্রাসেলসে ছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের খবর দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়লে সেখানে আর  থাকা হয়নি তাদের। চলে যেতে হয় জার্মানির বন শহরে। রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর বাসায় তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়। বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনও সেদিন সেখানে উপস্থিত হন। তিনি দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে সান্ত্বনা দিলেন।'

-শেখ হাসিনা এবং তার স্বামী ওয়াজেদ মিয়াও কামাল হোসেনকে অনুরোধ করেছিলেন একটি সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশে সংঘটিত ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। একইসঙ্গে তারা যে বন্দি জীবনযাপন করছেন না, সংবাদ সম্মেলন থেকে সেটাও জানাতে বলেন তারা। কিন্তু তিনি (ড. কামাল হোসেন) থাকতে পারলেন না সেই সংবাদ সম্মেলনে। দিলেন না কোনও বিবৃতি। চলে গেলেন লন্ডনে। 'ড. কামাল কেন রাজি হলেন না, অনুরোধ রাখলেন না, তা তখন সেখানে উপস্থিত কাউকেই তিনি বলেননি।'

কেন সংবাদ সম্মেলন জরুরি ছিল

 

'১৫ আগস্ট বনের মিডিয়া মহলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, বাংলাদেশের সদ্য নিহত রাষ্ট্রপতির দুই মেয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসায় গৃহবন্দি হয়ে আছেন। বিষয়টি রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর কানেও পৌঁছে। অবাঞ্ছিত গুজবের জবাব দিতে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সাংবাদিক পিজেলা বনকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন—এই গুজব বন্ধ করার উপায় কী। গিজেলা বন তাকে পরদিন সকালে বন শহরে একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব দেন। তিনি নিজেও এই বিষয়ে সহযোগিতা করবেন বলে জানান। এরপর শেখ হাসিনা ও ওয়াজেদ মিয়াও কামাল হোসেনকে অনুরোধ করেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে সংঘটিত ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে।'


/ ড. কামাল হোসেন /

 

স্থান ঠিক করেছিলেন অনিল দাশগুপ্ত
 

পশ্চিম জার্মানিতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং পরবর্তীকালে ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন অনিল দাশগুপ্ত। 'প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ের দুঃসহ জীবন' গ্রন্থে তার বরাত দিয়ে লেখক সরাফ আহমেদ উল্লেখ করছেন—'সেদিন  রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী তাকে (অনিল দাশগুপ্ত) বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে এভাবে হত্যা করার বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদী বক্তব্য দেওয়া এবং বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে যে তার গৃহবন্দি নন, সেই বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে পরিষ্কার করা দরকার। তিনি দ্রুত কাছাকাছি কোনও হোটেলে মিটিং রুমের ব্যবস্থা করতে পারেন কিনা, তাহলে ড. কামাল হোসেন উপস্থিত থাকতে থাকতেই একটি সংবাদ সম্মেলন করা যেতে পারে। এরপর অনিল দাশগুপ্ত দ্রুত বনের স্টাইনবের্গ হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সংবাদ সম্মেলনের জন্য একটি সভাকক্ষ ভাড়া করেন। রাষ্ট্রদূত তাকে সাংবাদিক গিজেলা বনের ফোন নম্বরও দিয়েছিলেন। অনিল দাশগুপ্ত তাকেও ফোন করেন। ফোন পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই গিজেলা বন স্টাইনবের্গের সভাকক্ষে উপস্থিত হন। তিনি সেখান থেকে কয়েকজন সাংবাদিককে ফোন করে বাংলাদেশের অভ্যুত্থান বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের খবর দেন এবং সেখানে হাজির হওয়ার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানান। স্টাইনবের্গ হোটেল কর্তৃপক্ষও দ্রুতই এই সংবাদ সম্মেলনের জন্য তাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। সংবাদ সম্মেলনের খবর পেয়ে জার্মান সম্প্রচার সংস্থা ডয়চে ভেলে, ডি ভেন্ট, ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে সাইতং পত্রিকা ও আরও কিছু জার্মান সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি দ্রুতই স্টাইনবের্গ হোটেলে উপস্থিত হন। কিন্তু সব ধরনের প্রস্তুতি সত্ত্বেও সেদিন ড. কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে যাননি।'


-এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার বক্তব্য পাওয়া যায়। ২০১৪ সালে এসে চোখের জলে প্রধানমন্ত্রীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন স্মরণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'জার্মানিতে নিযুক্ত তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সরকারি কর্মকর্তা হয়েও সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু আব্বার পররাষ্ট্রমন্ত্রী (ড. কামাল) বিদেশে ছিলেন। তার কোনও সহায়তা পাওয়া যায়নি। একটা বিবৃতি দিতে অনুরোধ করলেও তিনি রাজি হননি।'

কেন তিনি এমন করেছিলেন?

-অনিল দাশগুপ্তকে রাষ্ট্রদূত চৌধুরী আরও বলেছিলেন, ড. কামাল হোসেন দুপুরের আগেই লন্ডন রওনা হবেন। তার আগেই এই সংবাদ সম্মেলনটি হলে ভালো হয়। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, কামাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন এবং কথা বলবেন।

শেখ হাসিনার 'অনুরোধ রাখেননি' -সেদিন ড. কামাল হোসেন

সম্মেলনটি না হওয়ায় অনিল দাশগুপ্ত ও গিজেলা বনকে সেদিন খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। অনিল দাশগুপ্ত পরবর্তী সময়ে এই লেখককে বলেন, 'সেদিন সেই সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হলে তা হতো বহির্বিশ্ব থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ।'

'রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী পরে অনিল দাশগুপ্তকে জানান, তিনি চেষ্টা করেও ড. কামালকে সংবাদ সম্মেলনে পাঠাতে বিফল হন। কিন্তু ড. কামাল হোসেন কেন এমন করেছিলেন বলতে গিয়ে অনিল দাশগুপ্ত লেখক সরাফ আহমেদকে বলেন, 'আমি ঠিক জানি না। কিন্তু এমনও হতে পারে যে তিনি শেখ হাসিনা ও রেহানার অবস্থানের বিষয়ে কথা বলতে চাননি।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত